খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ মাঘ, ১৪৩১ | ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ফের ৩ দিনের রিমান্ডে
  মারধর ও হত্যাচেষ্টা মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পেলেন চিত্রনায়িকা
  আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত

আশাশুনিতে সাইকেল মিস্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ, আটক ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাাড়িয়া গ্রামে গলায় রশি দিয়ে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় অনিমেষ সরকার (৩৫) নামের এক সাইকেল মিস্ত্রির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের মা শেফালী রানী সরকার বাদী হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে আশাশুনি থানায় একটি হত্যা মামলাদায়ের করেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করেছে।

নিহত অনিমেষ সরকার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের নিরঞ্জন সরকারের ছেলে।

জমির সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে সাইকলে মিস্ত্রি অনিমেষ সরকারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে নিম গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) রাতে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার লাঙ্গলদাাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রাহুল দেব রায় বলেন, অনিমেষকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

মামলার বাদী নিহতের মা শেফালী রানী সরকার জানান, তার ছেলে অনিমেষ সরকারের মাড়িয়ালা মাছের সেটে সাইকেল ও ভ্যান মেরামতের একটি দোকান রয়েছে। এ ছাড়া অনিমেষ বাড়ি থেকে ২০০ গজ দূরে শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুল মালেক মল্লিকের বাড়ির পিছনে দুই বিঘার একটি ছোট মাছের ঘের রয়েছে। অনিমেষ প্রতিদিন রাতে দোকান বন্ধ করে ঘের থেকে ঘুরে বাড়িতে আসতো।

শেফালী রানী সরকার আরো জানান, সীমানা নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি মালেক মল্লিক ও তার ভাই অহিদ মল্লিকের সাথে মাঝেমধ্যে তার ঝগড়া হতো। গত সোমবার একটি পুকুর থেকে অন্য পুকুরে জল সরানোর সময় মাছ লাফ দেওয়াকে কেন্দ্র করে মালেক ও অহিদের সাথে অনিমেষের বিরোধ হয়। একপর্যায়ে অনিমেষকে তারা মারপিট করে। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার বেলা ১০টার দিকে অনিমেষের বাড়িতে শালিসি বৈঠক বসে। শালিসদাররা অনিমেষকে দায়ী করে মালেকের হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলে। অনিমেষ ক্ষমা চাইতে গেলে মালেক ও অহিদ তাকে অপমান করে।

এঘটনার পর অনিমেষ শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দোকান থেকে ঘের হয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় রাতে বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে স্থানীয়দেও মাধ্যমে খবর পেয়ে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের বাবুল আক্তার মোল্লার নিম গাছে নাইলনের দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় অনিমেষের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পায় তারা। অনিমেষকে হত্যার পর লাশের গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রাচর দেয় মালেক মল্লিক।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নোমান হোসেন জানান, খবর পেয়ে তিনিসহ দেবহাটা সার্কেল অফিসার হাসানুর রহমান ও সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। বাবুল আক্তার মোল্ল্যার ছাদ থেকে মৃতের পরিহিত হাফ প্যান্ট, প্যন্টের পকেটে থাকা গ্যাস লাইটার ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া নিহতের ঝুলন্ত লাশের পাশ থেকে ভিকটিমের ব্যবহৃত আরো একটি সট প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর আত্মহত্যার প্রচার দিতে লাশ দূরবর্তী বাবুল আক্তারের নিম গাছে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, পুলিশ আব্দুল মালেক মল্লিক, তার ভাই অহিদ মল্লিক ও জিল্লুুর রহমান নামে এক চায়ের দোকানদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। বর্তমানে তাদেরকে গোয়েন্দা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ময়না তদন্ত শেষে অনিমেষের মরদেহ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা শেফালী রানী সরকার কারো নাম উল্লেখ না করে শনিবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা (১৮) দায়ের করেছেন।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!